কিভাবে ধনী হওয়া যায়? অল্প বয়সে গরিব থেকে ধনী হওয়ার সহজ উপায়
কম বয়সে ধনী হওয়ার স্বপ্ন সবারই থাকে। ধনী হওয়ার কথা শুনলে মনের ভীতরটা যেনো লাফিয়ে উঠে। কিভাবে ধনী হওয়া যায়? কতো তাড়াতাড়ি ধনী হওয়া যায় এই বিষয়টি মাথার ভিতরে ঘোরপাক খেতে থাকে। এই পৃথিবীতে সবারই ইচ্ছে হয় একটু বিলাসিতা জীবন-যাপন করার। একটু সুখে থাকার। কিন্তু সবারই তো ধনী হওয়া হয়ে উঠে না। কেউ কেউ চেষ্টা করে সফল হয়ে উঠে। আবার কেউ কেউ ব্যর্থ হয়ে যায়। সঠিক উপায় জানা না থাকায় তারা ধনী হওয়া সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে না। ভাগ্যবান সে নয় যে সবকিছু ভালো পায়। ভাগ্যবান সে যা পায় ভাগ্যবান বানিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে একটি সহজ উপায় হলো ক্রমাগত অর্থ উপার্জন করে সঞ্চয় করা। এতে আপনার উপার্জন যাই হোক না কেনো আপনি যদি সঞ্চয় করতে থাকেন তাহলে আপনার ধনী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে থাকবে। টাকা-পয়সা সঞ্চয় করা খুবই কঠিন একটি বিষয়। অল্প বয়সের তরুণেরা খুব সাধারণত এটা করতেই পারে না। অল্প বয়স থেকে সঞ্চয় করা শুরু করলে সেটা যে কোনো মানুষকে অবসর সময়ে এসে ধনী করে দিতে পারে। ধনী এবং সফল হতে হলে সাধারণত সঞ্চয় করলেই হবে না। আপনাকে করতে হবে প্রচুর পরিমাণে অধ্যাবসায়। কেননা ধনী হওয়া মোটেই সহজ পদ্ধতি নয়। অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি কিছু কৌশল অবলম্বন করলেই ধনী হওয়ার পাশাপাশি সফলও হতে পারবেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে দুজন মহান লেখকের কথা তুলে ধরবো। চলুন তাহলে শুরু করি বিস্তারিত-
অল্প বয়সে গরিব থেকে ধনী হওয়ার উপায়
প্রথমে আমি আলোচনা করবো M.J.DEMARCO লেখা the millionaire fastlane বইয়ের লেখা কিছু কৌশল তুলে ধরবো। যার মাধ্যমে আপনি ২০-৩০ বছর বয়সে ধনী হতে পারবেন। এই বইয়ের লেখক যখন ২৬ বছর বয়স তখন একটা পার্কের সামনে বসে আইসক্রিম খাচ্ছিলেন। সে সময় তিনি দেখতে পান একটি ”লেম্বরগিনি” কার এসে তার সামনে থামলো। লেখক মনে করেন গাড়ির মালিক হয়তো ৪০-৫০ বছর বয়সের কোনো বৃদ্ধ লোক হবে। কিন্তু গাড়ি থেকে একজন ২৪ বছর বয়সের যুবক বের হয়। তিনি তখন যুবককে জিজ্ঞেস করে গাড়িটি কি আপনার নিজের। যুবক বলল, হ্যাঁ। গাড়িটি আমার নিজের ইনকামের টাকা দিয়ে কিনেছি। তখন মার্কো তাকে জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি কাজ করেন? তখন ছেলেটি বললো, আমি একজন INVENTOR. তখন মার্কো চিন্তা করেন তাহলে কি অল্প বয়সেও ধনী হওয়া সম্ভব। তারপর তিনি এই বিষয়টি নিয়ে রিচার্চ শুরু করে তিনটি রাস্তা খুঁজে বের করেন।
(১) Sidewalk
(২) Slowlane
(৩) Firstlane
(১) Sidewalk
এই Sidewalk মানুষের মন মানসিকতা হয় এমন যে যা করার আজ করে নেই। হাতে যা টাকা আছে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা, মজ-মাস্তি করে সব টাকা শেষ করে ফেলি। আর তারপর কিছুদিন পার হলে শূন্য পকেটে ঘুরে। আর মাস শেষে ফকিরের মতো বেঁচে থাকে। আসলে এসব মানুষদের কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই। শেষ বয়স পর্যন্ত গরিব আর মধ্যবিত্ত হয়েই বেঁচে থাকতে হয়।
(২) Slowlane
এই Slowlane মানুষের মূল্যবান বিষয় নিজের সময় বিক্রি করে অন্যের অফিসে চাকরি করে। চাকরি করতে করতে নিজের জীবন শেষ হয়ে গেলেও তারা আর ধনী হতে পারে না। কারণ চাকরি করে জীবনে ধনী হওয়া সম্ভব নয়। চাকরি করে বাড়ি ভাড়া, সন্তানের লেখা-পড়ার খরচ, মাসিক বাজারের মধ্যেই চলে যায়। তবে এরা Sidewalk এর থেকে একটু ভালো। কারণ এরা চাকরি করে কিছু টাকা সেভ করে ভবিষ্যতের জন্য। তবে শেষ পর্যন্ত এই টাকা হয় নিজের ছেলে-মেয়ে নিয়ে যায় বা নিজের ঔষুধের পিছনে খরচ হয়ে যায়। ফলে তারও ধনী হতে পারে না। তারা মধ্যবিত্ত হয়ে মারা যায়।
(৩) Firstlane
এই Firstlane প্রকৃতির মানুষেরা টাকার চেয়ে সময়ের মূল্য অনেক বেশি দিয়ে থাকে। কারণ তারা জানে টাকার চেয়ে সময়ের মূল্য অনেক বেশি। Firstlane লোকেরা টাকা বাঁচানোর চেয়ে কিভাবে বেশি টাকা ইনকাম করা যায় সেদিকে বেশি মনোযোগী হয়ে থাকে। Firstlane লোকেরা কাজ করুক বা না করুক তাদের টাকা আয় হতেই থাকে। তাই আমাদের Firstlane লোকের মতো ভাবতে হবে। Firstlane লোকেদের মতো ভাবতে হলে আমাদের তিনটি বিষয় ফোকাস করতে হবে।
(ক) সময়
এমন কাজ খুঁজে বের করতে হবে যেগুলোতে সময় কম দেওয়ার লাগে এবং বেশি টাকা ইনকাম করা যায়। যেমন: ফ্রিল্যান্সিং, ব্যবসা, বিভিন্ন আইটি ফার্মে জব করা ইত্যাদি।
(খ) প্যাসিভ আয়
প্যাসিভ আয় করতে হবে। তার মানে আপনাকে এমন কাজ খুঁজে বের করতে হবে যার মাধ্যমে আপনি অসুস্থ্য থাকলেও ইনকাম করতে পারেন। যেমন: ব্লগিং, ইউটিউবিং, অনলাইন শপ ইত্যাদি। এই ধরণের যদি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন তাহলে কাজ না করেও টাকা আয় করতে পারেন।
(গ) টাকা থেকে টাকা
আপনাকে টাকা থেকে টাকা ইনকাম করতে হবে। ধরুন, আপনি কোনো একটা জব করতেছে। সেখান থেকে দুই-এক মাসে যা টাকা ইনকাম করেছে তা সবকিছু খরচ করে ফেলেছে। তাহলে হবে না। সেখান থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করে ইনভেষ্ট করতে হবে। ফলে সেখান থেকে টাকা বাড়াতে হবে। মানে টাকা থেকে টাকা বের করার উপায়টা খুঁজে বের করতে হবে।
দ্বিতীয় বইটি হলো RICH DAD POOR DAD
রবার্ট টি কিয়োসাকি লেখা বইটিতে আমরা পড়ে বুঝতে পারি কিভাবে অল্প বয়সে সঠিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ধনী হওয়া যায়। রবার্ট টি তার বইটিতে এমন কিছু সফলতা গল্প বলেছেন কেবল মাত্র আমাদের জন্য যাতে আমরা আমাদের বিজনেসকে বৃদ্ধি করতে পারি এবং সাথে বলেছেন কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয়। বইটির মূলমন্ত্র হলো কিভাবে টাকা কাজ করে। অর্থাৎ আমরা যে টাকা নিজেদের জন্য আয় করি তা কিভাবে বৃদ্ধি হয় এবং কিভাবে বৃদ্ধি করা সম্ভব। তাহলে চলুন রবার্ট এর বই থেকে কিছু আলোচনা আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো-
রবার্ট টি কিয়োসকি এর মতে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। আমরা স্কুল লাইফে যা কিছু শিখি তার ১০% আমাদের প্রাকটিক্যাল লাইফে কাজে লাগে না। প্রাকটিক্যাল লাইফে আমরা যা শিখি তা আমাদের পরিবার থেকে বা বাড়ির আশেপাশে থেকে সংগ্রহ করি। আমরা ছোটবেলায় যখন পড়াশোনা করতাম তখন আমাদের বাবা-মা বলতো পড়াশোনা করে ভালো চাকরি পেতে হবে। যাতে তুমি অনেক টাকা উপার্জন করতে পারো। রবার্ট টি এর Poor Dad অর্থাৎ নিজের গরিব বাবা তিনি একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন। যিনি PHD করেছিলেন এবং এমনকি একটি ভালো কম্পানিতে চাকরি করতেন। তবুও তিনি আর্থিক সংকটে ভুগতেন। অথচ তিনি রবার্টকে বলতেন তোমাকে লেখাপড়া করতে হবে ভালো চাকরি করার জন্য। ভালো চাকরি পেলে তুমি ভালো টাকা উপার্জন করতে পারবে। কিন্তু তার Rich Dad অর্থাৎ যিনি ছিলেন তার বন্ধুর বাবা তিনি বেশি লেখাপড়া করেন নি। তিনি ছিলেন মাত্র অষ্ঠম শ্রেণী পাশ। কিন্তু তিনি ছিলেন একজন বিশাল বড় ধনী ব্যক্তি। তিনি রবার্টকে বলতেন, তোমাকে লেখাপড়া করতে হবে যাতে তুমি ভালো একটি কম্পানি গড়তে পারো এবং ভালো ছেলেদের চাকরি দিতে পারো। তার POOR DAD বলে তোমাকে চাকরি করতে হবে টাকা উপার্জন করার জন্য RICH DAD তুমি এমন কিছু উপায় বের করো যাতে টাকা তোমার জন্য কাজ করে। RICH DAD মারা যাওয়ার সময় অনেক সম্পদ রেখে গিয়েছিল। আর POOR DAD মারা যাওয়ার সময় কিছু পূর্বের উইল রেখে গিয়েছিল।
সঠিক ব্যক্তির কাছ থেকে সঠিক জ্ঞান। অর্থাৎ সঠিক ব্যক্তির কাছ থেকে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে না পারলে কোনো বিজনেসে সফল হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের ধনী হওয়ার জন্য সেই সমস্ত RICH DAD খুঁজে বের করতে হবে যাদের কাছ থেকে আমরা সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবো। বর্তমান সময় ইন্টারনেট যুগ। এই সময়ে RICH DAD খুঁজে পাওয়া খুব একটা কঠিন কাজ নয়।
বিশ্লেষণ এবং সিদ্ধান্ত
ইনকামের প্রচুর রাস্তা পড়ে রয়েছে। কিন্তু আমাদের ইনকামের ব্যাপারে দুটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। ইনকামকে আমরা দুটি ভাগে ভাগ করি।
১। ACTIVE INCOME
২। PASSIVE INCOME
১। ACTIVE INCOME
ACTIVE INCOME সেই সমস্ত জায়গা যেখানে আপনি যতক্ষন কাজ করবেন ততক্ষন আপনার ইনকাম হবে। যেমন, গাড়ি চালানো, দোকান চালানো প্রভূতি। এই সমস্ত জায়গায় আপনি কাজ না করলে কোনো ইনকাম হবে না।
২। PASSIVE INCOME
PASSIVE INCOME হলো এমন যখন আপনি ঘুমিয়ে থাকবেন তখন ইনকাম হতে থাকবে। যেমন, আপনি একটি ওয়েব সাইট ক্রিয়েট করেন। সেখানে পোষ্ট করেন। মানুষ এসে বিভিন্ন সময়ে আপনার ওয়েব সাইটে প্রবেশ করবে। সেখান থেকে আপনি গুগলের মাধ্যমে টাকা অর্জন করতে পারবেন। এছাড়াও ব্লগ তৈরি করুন, ইউটিউব চ্যানেল খুলুন, অ্যাফলিয়েট মার্কেটিং করুন।
শেষ কথা
আমরা যদি আমাদের জীবনকে ইমপ্রুভ করতে চাই তাহলে আমাদের ব্রেণে সেই ধরণের জ্ঞান এবং আইডিয়া থাকা দরকার। যেটা একজন সফল মানুষের মাইন্ডে থাকে। প্রত্যেকটা সফল মানুষের জীবনী বা বই পড়ি তখন আমরা আমাদের জীবনকে সেই ভাবে চালানোর চেষ্টা করি এবং সেই রকম ভাবে অ্যাকশন নেই। আমি কিন্তু একবারও বলি নাই যে যারা চাকরি করে জীবন অতিবাহিত করতেছে তারা সুখি নয়। আমি আপনাদের চাকরি করতে নিষেধ করছি না। এই কথাগুলো আমি তাদের বলতেছি যারা নিজেদেরকে চাকরি বা অন্য কোনো গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বড় কিছু করতে চায়। তাই আপনাকে টাকা উপার্জন করা শিখলে হবে না। টাকাকে দিয়ে কিভাবে কাজ করা যায় সেটা শিখতে হবে। সুতরাং অল্প বয়সে ধনী হওয়ার জন্য আপনি যদি এই বিষয়গুলো মেনে চলেন তাহলে আপনি সফল হবেন। আপনার জীবন হয়ে উঠবে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধশালী।
[…] […]